সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ আরাফাত সানির জায়গায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরেকজন স্পিনার উড়িয়ে নিতে হবে। সেই স্পিনারটি কে হবেন? তা ঠিক করতে বেঙ্গালুরুতে বসা বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের আলোচনায় নাকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরীক্ষিত বোলার আবদুর রাজ্জাককেই চেয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রিয় বন্ধুকে চেয়ে না পেলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে একই দলে ঠিক পেয়ে যাচ্ছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের অধিনায়ক। গত পরশু ঢাকার প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েস’ নামের লটারিভিত্তিক দলবদলে মাশরাফিকে বেছে নেওয়ার আগেই যে কলাবাগান ক্রীড়া চক্র ধরে রেখেছিল আগের মৌসুমে তাদের হয়ে খেলা ওয়ানডেতে দেশের সফলতম বাঁহাতি স্পিনারকেও। জাতীয় দলে বেশ কিছুদিন ধরেই উপেক্ষিত রাজ্জাকের সঙ্গে তারকা মর্যাদায় যোজন যোজন এগিয়ে থাকা মাশরাফির জন্য হাত তোলা কলাবাগান কিন্তু লটারিতে ১২ দলের মধ্যে ছিল ১১ নম্বর সিরিয়ালে! তবে শুধু মাশরাফিই নন, লটারির শুরুতেই দল পাননি তারকাখ্যাতির তুঙ্গে থাকা আরো কয়েকজনও। এঁদের মধ্যে সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানের কথা আলাদা। আইপিএলে চলে যাওয়ায় এঁদের প্লেয়ার্স ড্রাফটেই রাখা হবে কি না, তা নিয়েও ছিল নানামুখী মত। অবশেষে তালিকায় ওই দুজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ক্লাবগুলোকে বলেও দেওয়া হয় যে তাঁদের যেন বুঝেশুনে নিজ দায়িত্বেই নেয়। সুপার লিগের শেষ দিকে পাওয়ার আশাতে ‘আইকন’ ও ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের দ্বিতীয় দফার লটারিতে সাকিবকে নেয় আবাহনী আর মুস্তাফিজকে মোহামেডান। এঁদের না হয় অধিকাংশ সময়ই পাওয়া যাবে না কিন্তু তামিম ইকবালকে তো যাবে! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ২৯৫ রান করা ওপেনার এর আগে পাকিস্তান সুপার লিগেও (পিএসএল) ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। সেই হিসাবে কার্যকারিতার দিক থেকেও তাঁর চাহিদা এবার তুঙ্গে থাকার কথা ছিল। কিন্তু লটারিতে প্রথম তিনটি দল তাঁকে ডাকেইনি। চার নম্বর সিরিয়ালে থাকা আবাহনী তামিমকে নেওয়ার সময়ও ঠিক হয়নি মুশফিকুর রহিমের গন্তব্য। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের হিসাব বলছে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের জনপ্রিয়তা ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিয়েছেন যে তাঁর ভক্তের সংখ্যা সাত মিলিয়ন পেরিয়েছে, সাকিবের পর যা কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ‘ফলোয়ার’ সংখ্যায় বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা দশেও ঢুকে পড়ার খবর দেওয়া মুশফিককে নিয়েছে লটারিতে পাঁচ নম্বর সিরিয়ালে থাকা মোহামেডান। অথচ তারকাখ্যাতিতে কিংবা ফলোয়ার সংখ্যায় এঁদের প্রত্যেকের চেয়ে অনেক পেছনে থাকা একজনই এই দলবদলের অনুষ্ঠানে হয়ে উঠেছিলেন সবচেয়ে প্রার্থিত নাম। গত পরশুর দলবদলের খোঁজখবর করে থাকলে তো জানেনই যে লটারিতে এক নম্বর সিরিয়াল পাওয়া শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব শুরুতেই লুফে নেয় মাহমুদ উল্লাহকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্রমেই নিজের কার্যকারিতার প্রমাণ দিতে থাকা এ ব্যাটসম্যান যে তারকাখ্যাতিতে পিছিয়ে থেকেও সাফল্যের নিশ্চয়তা হয়ে উঠেছেন ইতিমধ্যেই। এমনই যে দলবদলের এক দিন পরও মাহমুদ উল্লাহকে না পাওয়ার আফসোসটা ভুলতে পারছে না তাঁর গত মৌসুমের দল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলটির সাধারণ সম্পাদক তানজিল চৌধুরী গতকালও বলছিলেন, ‘আমরা যেকোনো মূল্যে রিয়াদকেই (মাহমুদের ডাকনাম) ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। কারণ ও ছিল গত মৌসুমে আমাদের সফল দলের অধিনায়কও।’ প্রিমিয়ার লিগেই শুধু নয়, মাহমুদ উল্লাহর নেতৃত্বগুণ নজর কেড়েছিল সবশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল)। বরিশাল বুলসের অধিনায়ক পাশাপাশি নানা ফরম্যাটে ধারাবাহিকভাবে রানও করায় দুয়েমিলে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘দারুণ প্যাকেজ’ও। এমন একজনে আস্থা রাখতে চাইবে যেকোনো দলই। শেখ জামালও তাই রেখেছে। কিন্তু মাহমুদ উল্লাহকে না পাওয়া প্রাইম ব্যাংক আস্থা রাখল কার ওপর? লটারিতে দুই নম্বর সিরিয়ালে থাকা দলটি কোনো ‘আইকন’কে না নিয়ে বেছে নেয় ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরির সাব্বির রহমানকে। তানজিল সেটিরই ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন এভাবে, ‘‘রিয়াদকে না পাওয়ার পর আমরা আরেকজন ‘আইকন’কেও নিতে পারতাম। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নেই সাব্বিরকে নেওয়ার। আমার মনে হয় ওর গত কিছুদিনের পারফরম্যান্সও সবাইকেই মুগ্ধ করার মতো। মনে হয়েছে অন্য যে কারো চেয়ে ও-ই উপযুক্ত। আর সেজন্য প্রথাগত ভাবনার বাইরে গিয়েই ওকে নেওয়ার সাহস আমরা দেখিয়েছি। নিঃসন্দেহে ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ।” দলবদলে বড় তারকাদের পেছনে ফেলা মাহমুদ উল্লাহ ও সাব্বিরের মতো না হলেও চাহিদা কম ছিল না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গত কিছুদিন নিষ্প্রভ সৌম্য সরকারেরও। কোনো কোনো ‘আইকন’-এর আগেই দল পেয়েছেন তিনি। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের তাঁকে নেওয়ার পেছনে গত লিগের পারফরম্যান্সও ভূমিকা রেখে থাকতে পারে। প্রাইম ব্যাংকের শিরোপা জয়ে ১৫ ম্যাচে ৬১৫ রান করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখাতেই তো সৌম্যর জন্য খুলে গিয়েছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের দরজা। - info .kalerkantho.com
No comments:
Post a Comment